মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ

সকলের মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ গুলো জানা থাকলে খুশকি দুর করা সহজ হয়। খুশকি প্রায় প্রতিটি মানুষের শরীরের অন্যতম প্রধান সমস্যা। আজকে আমরা মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ সম্পর্কে  আলোচনা করবো। খুশকি দুর করার পূর্বে মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ গুলো জানতে হবে।
মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ
চলুন জেনে নেই খুশকি কি এবং মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ কারণ গুলো কি কি।

সূচিপত্রঃ- মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ

ভুমিকাঃ

খুশকি প্রায় প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের  সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি। সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যা গ্রহণ না করলে খুশকির সমস্যা আরও বৃদ্ধি হতে পারে। খুশকি দূর করতে এবং চুলের যত্ন নেওয়ার পূর্বে আমাদেরকে জানতে হবে মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ। সারা বছরই প্রায় খুশকি প্রাদুর্ভাব থাকে তবে শীতকাল এবং বর্ষাকালে খুশকির পাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। তবে বর্তমানে আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন বিভিন্ন কারণে সারা বছরই সমানভাবে খুশকির সমস্যা দেখা দেয়।

খুশকি কিঃ

প্রতিটি জিনিসেরই জীবনের একটি চক্র রয়েছে। মানুষের শরীরে প্রতিটি কোষ একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে মৃত্যুবরণ করে। এবং সেখানে পুনরায় নতুন কোষের জন্ম হয়। মাথার ত্বক বা স্কাল্পে মারা যাওয়ার কোষগুলো জমে যাওয়ার ফলে সাদা আঁইশের মতো দেখায় এবং মাথায় প্রচন্ড চুলকানি হয়। এই মৃত কোষগুলোকে খুশকি বলা হয়।
মাথার ত্বক বা স্কাল্পে ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরনের ফাঙ্গাস থাকে।কোন কারণে এই ফাঙ্গাসের পরিমান বৃদ্ধি মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম। চলুন মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জনে নেয়া যাক।

খুশকি হওয়ার লক্ষণঃ

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা খুশকিকে সাধারণত সেবোরিয়া বা সেবোরিহিক ডার্মাটাইটিস বলে থাকেন। খুশকির লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
  • ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া।
  • একজিমা
  • নাক, কান ও ভ্রূ এর উপর ফুসকুড়ি হওয়া।
  • মাথার ত্বক এবং মুখের ত্বক তৈলাক্ত হওয়া

মাথায় খুশকি হওয়ার কারণঃ

মাথায় খুশকি হওয়া কোন রোগ বা রোগের লক্ষণ নয়। সাধারণত মাথায় ধুলোবালি বা ডাস্ট জমা হওয়া এবং ছত্রাক বা ফাঙ্গাসের সংক্রমনের কারণে খুশকি হয়। নিম্নে খুশকি তৈরি হওয়ার কিছু অবস্থা বর্ণনা করা হলো। মাথা থেকে ঝরে পড়া মৃত কোষগুলোকে সাধারণত ড্যানড্রাফ বা খুশকি বলে। প্রতিনিয়তই আমাদের মাথা থেকে মৃত কোষগুলো ঝরে পড়ে কিন্তু সব সময় সেগুলো দেখা যায়না কারণ সে গুলো খুব স্বচ্ছ এবং কোয়ালিটি খুব ভালো।
মাথার ত্বক বা স্কাল্প থেকে নিয়মিত কোষ মারা য়ায়। মৃত কোষগুলো ঝরে পড়ে এবং নতুন কোষ জন্মায়। এটি হলো মাথার ত্বক বা স্কাল্পের কোষের জীবন চক্র। যখন মৃত কোষগুলোরঝেরে পড়া অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায় তখন আমরা খুশকি দেখতে পায়। নিম্নে মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ গুলো বর্ণনা করা হলো-
ত্বকের শুষ্কতাঃ শীতকালে আবহাওয়ার আদ্রত বা পানির পরিমান কম থাকার ফলে শরীরের ত্বক শুষ্ক হওয়ার পাশাপাশি মাথার ত্বক ও শুষ্ক হয়ে যায়। যার ফলে খুশকি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বাসাবাড়ির বাইরের আবহাওয়া এবং ভেতরের আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে খুশকি দেখা দিতে পারে।
তৈলাক্ত ত্বকঃ মাথার ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হলেও খুশকি হতে পারে। ত্বক তৈলাক্ত হওয়া মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম। আবার যারা বেশি পরিমাণে ঘামেন তাদের ক্ষেত্রেও খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি। মাথার ত্বক তৈলাক্ত হওয়ার ফলে সহজেই মাথায় ধুলাবালি বা ডাস্ট জমে যায়। ফলে মাথায় খুশকি দেখা দেয়।
যথেষ্ট পরিমাণে না আঁচড়ানোঃ নিয়মিত চুল না আঁচড়ানোর ফলে খুশকি হতে পারে।  বিশেষ করে যারা নিয়মিত চুল আঁচড়ান না বা চুল পরিষ্কার করেন না তাদের ক্ষেত্রে খুশকির সমস্যা বেশি। নিয়মিত চুল না আচড়ালে মাথার ত্বকের মৃত কোষগুলো ঝরে পড়ে না যার ফলে খুশকি হিসেবে দেখা দেয়।
অতিরিক্ত তৈল ব্যাবহারঃ অতিরিক্ত তেল ব্যবহার মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে একটি। যে সকল নারী বা পুরুষ মাথায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করেন তাদের মাথায় খুশকির সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। মাথায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের ফলে তেলগুলো মাথার চুলের গোড়ায় ইস্তুপ আকারে জমা হয় এবং খুব সহজেই ধুলোবালি আটকে যায়। যার ফলে ছত্রাকের সংক্রমনের কারণে খুশকির পরিমাণ বেড়ে যায়।
নিম্নমানের পণ্য ব্যবহারঃ মাথার চুল বা ত্বকের যত্নের জন্য নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার করা মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে সাধারণ। মাথার চুল এবং ত্বক খুবই সংবেদনশীল জিনিস। তাই এ সকল জিনিসের যত্নের জন্য অবশ্যই ভালো মানের এবং ভালো ব্যান্ডের পন্য বা প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত।
এ সকল পণ্য ক্রয় পর দেখতে হবে পণ্যটি আপনার চুল এবং ত্বকের সাথে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা। যে পণ্যটি আপনার চুল এবং ত্বকের সাথে উপযুক্ত সেই পণ্যটি ব্যবহার করুন।
বংশগত কারণঃ বংশগত কারণ বা অন্য কোন বংশগত রোগ আপনার মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। বংশগত কারণেও খুশকি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
অতিরিক্ত ময়লাঃ যারা নিয়মিত চুল এবং মাথা পরিষ্কার করেন না তাদের খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মাথার চুল নিয়মিত পরিষ্কার না করলে খুব সহজেই অতিরিক্ত ময়লা জমে খুশকি হতে পারে। সুতরাং যারা জীবন জীবিকার কাজে বা অন্য কোন কাজে ধুলাবালি যুক্ত এলাকায় বা ঘরের বাইরে প্রতিনিয়ত যান তাদের নিয়মিত মাথার চুল এবং মাথা ভালো ভাবে পরিষ্কার করা উচিত। নিয়মিত মাথার চুল পরিষ্কার না করা মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ।
শ্বেত প্রদর জাতীয় রোগঃ যাদের ইস্ট জাতীয় বা অ্যালার্জি সমস্যা আছে তাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। সূর্য থেকে আসা অতি বেগুনি রশ্মি এবং ইস্ট এর পারস্পরিক ক্রিয়া খুশকি হওয়ার প্রবণতা কে বৃদ্ধি করে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে সাবান/ শ্যাম্পু না করাঃ পরিষ্কার না রাখলে সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। নিয়মিত মাথার চুল সাবান অথবা শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার না করলে খুশকি হতে পারে।
সঠিক খাদ্যাভাসের অভাবঃ কোন ধরনের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সমাধানের বাধা হল সঠিক খাদ্য অভ্যাস না থাকা। সঠিক খাদ্য অভ্যাস না থাকার কারণে খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। যারা নিয়মিত খাবার গ্রহণ করেন না তাদের ক্ষেত্রে মাথার খুশকি হওয়া সহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণ মতো ভিটামিন বি ও জিংক সংযুক্ত না থাকলে খুশকি বেড়ে যেতে হয়। তবে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের বৃদ্ধিঃ ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাস প্রতিটি মানুষের মাথার ত্বকে বিদ্যমান থাকে। কোন কারনে এই ভাঙ্গাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে খুশকি হতে পারে। ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের পরিমাণ বৃদ্ধি হওয়া মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পে এই ফাঙ্গাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বা তেল শুষে নেয় যার ফলে চুল শুষ্ক হয়ে খুশকি সৃষ্টি হয়।
ফাঙ্গাল ইনফেকশনঃ বিশেষজ্ঞদের মতে, মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে ফাঙ্গাল ইনফেকশন অন্যতম। চুল যথাযথ পরিষ্কার না করা, অতিরিক্ত ঘাম, ধুলাবালি জমে থাকা ইত্যাদি কারণে ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার ফলে পুস্কি সৃষ্টি হতে পারে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপঃ মাথায় খুশকি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত মানসিক চাপ। যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করেন বা কোন চাকরি করেন তাদের ক্ষেত্রে মাথায় খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে যে কোন সমস্যায় দেখা দিতে পারে। রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যাওয়া মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ হতে পারে। এছাড়াও কিছু কিছু রোগ রয়েছে যে রোগের ফলে মাথায় খুশকি হতে পারে।
যেমন- পারকিন্সন ডিসিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, সেন্সিটিভ ত্বক ও ত্বকের সমস্যা (সোরিয়াসিস, একজিমা) ইত্যাদি। তাছাড়া, যারা এইচ আই ভি আক্রান্ত তাদের মধ্যে ১০.৬% মানুষের খুশকি সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
ধুলোবালি বা ডাস্ট জমলেঃ মাথার ত্বক এবং চুলে অতিরিক্ত ধুলোবালি এবং ডাস্ট জমার কারণে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত চুল পরিষ্কার করুন।
পানির সমস্যারঃ মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ কারণগুলোর মধ্যে পানির সমস্যা গুরুত্বপূর্ণ। পানির সমস্যার কারণে চুলের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে এমনকি চুল উঠে যায়। যদি পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে সে পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বক খুব দ্রুত  শুষ্ক হয়ে যায় এবং মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা দেয়।
চুলে গরম পানির ব্যবহারঃ মাথায় খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো চুলে গরম পানি ব্যবহার করা। যারা গোসলে গরম পানি ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই গোসল এবং চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করুন।
চিরুনি বা তোয়ালে শেয়ার করাঃ খুশকি হওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ হলো চিরুনি অথবা তোয়ালে শেয়ার করা। চিরুনি বা তোয়ালে শেয়ার করার মাধ্যমে খুব দ্রুত খুশকির সংক্রমণ হয়ে থাকে। কারো মাথায় খুশকি আছে এমন কারো ব্যবহৃত চিরুনি অথবা তোয়ালে অন্য কেউ ব্যবহার করলে যার খুশি নেই তারও খুশকি হতে পারে। এক্ষেত্রে অপরের ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার না করায় উত্তম।

উপসংহারঃ

বর্তমানে খুশকি এমন একটি সমস্যা যা একজন মানুষকে  বিব্রত এবং অপ্রীতিকর পরিবেশে ফেলতে পারে। তাই আমাদের মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার। মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ এগুলো জানা থাকলে খুব সহজে খুশকি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। 25790

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url