ঘুম না হওয়ার কারণ - রাতে ঘুম না আসা রোগের নাম
পেজ সূচিপত্রঃ ঘুম না হওয়ার কারণ - রাতে ঘুম না আসা রোগের নাম
ভূমিকা
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঘুম না হওয়ার কারণে অনেকে ডিপ্রেশনে চলে যান। আবার ঘুম না হওয়ার কারণে সুস্থ ব্যক্তি ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘুমের কারণে আমাদের শরীর, মন আরাম পায়। সারাদিনের ক্লান্তির পর যখন রাত্রে ঘুমাতে যাওয়া যায় তখন যদি ঘুম না আসে তাহলে মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই আমাদের ঘুম না হওয়ার কারণ ও রাতে ঘুম না আসা রোগের নাম সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।
ঘুম না আসা একটি বড় সমস্যা হতে পারে এবং এর কারণে মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা হতে পারে। আশা করি আপনি আজকের এই আর্টিকেল পড়ে খুব সহজে বুঝতে পারবেন ঘুম না হওয়ার কারণ, রাতে ঘুম না আসা রোগের নাম সম্পর্কে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ঘুম না হওয়ার কারণ - রাতে ঘুম না আসা রোগের নাম বিস্তারিতভাবে।
ঘুম না হওয়ার কারণ
ঘুম না হওয়ার কারণ হিসেবে বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক ঘুম না হওয়ার কারণগুলি।
- মানসিক চাপ, টেনশন এবং অতিরিক্ত চিন্তা।
- মানসিক স্বাস্থ্যের খারাপ অবস্থা (বিষন্নতা)।
- শারীরিক স্বাস্থ্যের খারাপ অবস্থা (হার্টের সমস্যা, অনেক দিনের ব্যথা বা কোন কষ্টকর অসুখ)।
- আপনি যে ঔষধ খান কোন কারনে সে ঔষধের প্রভাবেও ঘুম কম হতে পারে।
- দৈনন্দিন জীবনে কোন পরিশ্রম না করলে, ঘুম আসে না কারণ শরীর সারাদিন রেস্ট পেয়ে যায়।
- পর্যাপ্ত পরিবেশ না থাকার কারণেও ঘুম হয় না।
রাতে ঘুম না আসা রোগের নাম
রাতে ঘুম না আসা রোগের নাম সম্পর্কে আমরা সবাই জানতে বা খোঁজ করে থাকি। চলুন তাহলে এবার রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম সম্পর্কে জানি। সুস্থতার জন্য চাই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম। সারাদিনের পরিশ্রমের পর নির্বিঘ্ন ঘুম দিতে পারে প্রশান্তি। ঘুম না হওয়ার কারণে এক পর্যায়ে বড় ধরনের রোগ ব্যাধি দেখা দেয়। 'ইনসমনিয়া' শব্দটির সঙ্গে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। এর বাংলা অর্থ হচ্ছে-অনিদ্রা বা নিদ্রাহীনতা।
'ইনসমনিয়া' হচ্ছে- একটি অনিদ্রা জনিত রোগ বা এক ধরনের Sleep disorder, যাতে ঘুমের পরিমাণ অথবা ঘুমের গুণগত মান এদের যেকোনো একটি বা উভয়টিতে সমস্যা থাকে। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ দিনের মধ্যে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমায়। এটি একটি স্বাভাবিক অবস্থা, কিন্তু যেসব রোগী এই রোগে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে ঘুমের পরিমাণ অনেক কম। তারা স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে পারে না, বা দিনে ও রাতে মিলে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ঘুমায়। যা আমাদের শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নয়।
ইনসমনিয়া মূলত দুই রকম-
- প্রাইমারি ইনসমনিয়া- যার কোন সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
- সেকেন্ডারি ইনসমনিয়া- ইনসমনিয়া যখন অন্য কোন কারণে অর্থাৎ কোন মানসিক বা শারীরিক রোগের কারণে হয়, মানসিক চাপ বা টেনশন ইত্যাদি।
ইনসমনিয়া থেকে মুক্তির উপায় কি চলুন এই বিষয়ে এবার জেনে নেওয়া যাক। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি ইনসমনিয়া দুই ধরনের, প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি। প্রথমে প্রাইমারি ইনসমনিয়া চিকিৎসা বিষয়ে আসি, যেহেতু এর সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই এর চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি অনেক জটিল ও কষ্টসাধ্য। প্রাইমারি ইনসমনিয়া চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি, তা হল-
- সাইকোথেরাপি- বিভিন্ন ধরনের থাইকোথেরাপি বিভিন্নভাবে এবং ধাপে প্রয়োগ করা যায়। যেমন- CTB, Sleep restriction, Relaxation therapy, Sleep hygiene ইত্যাদি।
- ফার্মাকোথেরাপি-বিভিন্ন রকম সাইকোথেরাপি যখন পরিপূর্ণভাবে কাজ না করবে বা ব্যর্থ হবে, তখন অবশ্যই ফার্মাকোথেরাপি বা ঔষধ প্রয়োজন হবে।
এবার সেকেন্ডারি ইনসমনিয়া চিকিৎসায় আসা যাক। সেকেন্ডারি ইনসমনিয়া তুলনামূলকভাবে শহর। চিকিৎসার মাধ্যমে ইনসমনিয়া কারণটি দূর করতে পারলে ঘুম স্বাভাবিক হয়ে আসে। এক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদে কিছু সিডেভিট জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা প্রয়োজন তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
মনে রাখবেন অপর্যাপ্ত ঘুম বা ইনসমোনিয়া আপনার দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আম স্বল্প মেয়াদে অথবা দীর্ঘ মেয়াদে কিছু ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কখনো এ জাতীয় ঔষধ খাবেন না।
রাতে ঘুম না হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
- মানসিক চাপ, টেনশন এবং অতিরিক্ত চিন্তা।
- মানসিক স্বাস্থ্যের খারাপ অবস্থা (বিষন্নতা)।
- শারীরিক স্বাস্থ্যের খারাপ অবস্থা (হার্টের সমস্যা, অনেক দিনের ব্যথা বা কোন কষ্টকর অসুখ)।
- আপনি যে ঔষধ খান কোন কারনে সে ঔষধের প্রভাবেও ঘুম কম হতে পারে।
- দৈনন্দিন জীবনে কোন পরিশ্রম না করলে, ঘুম আসে না কারণ শরীর সারাদিন রেস্ট পেয়ে যায়।
- পর্যাপ্ত পরিবেশ না থাকার কারণেও ঘুম হয় না।
- প্রথমত, ঘুমানোর অন্তত দু'ঘণ্টা থেকে সমস্ত কাজ ও চিন্তাকে নিজের থেকে দূরে রাখুন। নিজের সাথে একটু সময় কাটান, টিভি দেখুন, সিনেমা দেখুন, কি কি কাজ সামনে সপ্তাহে করবেন তার একটা লিস্ট করুন বা রান্না করতে ভালো লাগলে রান্না করুন।
- এছাড়া শুতে যাওয়ার আগে এক কাপ চা খেতে পারেন, তাতে আপনার মাথা পরিষ্কার হবে। কিংবা হালকা গরম পানিতে গোসল করতে পারেন এতে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
- আপনার ফোন থেকে শুরু করে যাবতীয় ইলেকট্রনিক জিনিস অফ করুন, কারণ এই ইলেকট্রনিক থেকে যে রেডিয়েশন বের হয় তা আমাদের শরীরের জন্য ঠিক নয়।
- বাদাম বা দই খেতে পারেন ঘুমানোর আগে, এটা মেলাটোনিন নিঃসরণে সাহায্য করে।
- ঘুমের ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে অল্প মেডিটেশন করতে পারেন।
- ঘরের লাল আলো জ্বালাতে পারেন কারণ গবেষনাতে দেখা গিয়েছে লাল আলো মেলাটোনিন নিঃসরণ বাড়ায় এবং ঘুমাতে সাহায্য করে।
কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয়
- তৈলাক্ত মাছ
- কলিজা
- ডিমের কুসুম
- মাখন
- উন্নত প্রজাতির মাশরুম
- ভিটামিন ডি-র সবচেয়ে ভালো উৎস সূর্য
রাতে ঘুম আসে না কেন
- কাজের চাপ- করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোম কাজের পরে সরাসরি উপস্থিত হয়ে অফিস করায় অনেকেরই কাজের চাপ বেড়েছে। নানারকম দুশ্চিন্তার সঙ্গে কাজের চাপ যোগ হয়ে স্ট্রেস বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণ।
- বৈদ্যুতিক যন্ত্রে অতিরিক্ত সময় ব্যয়- মোবাইল, কম্পিউটার বা ট্যাব ইত্যাদি যন্ত্রের নীচে আলো চোখের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি তা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে।
- বিষন্নতা- কারো পরিবারে বা কাছের কেউ কোন রোগে আক্রান্ত হলে তা বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্বিগুণ মাত্রার চিন্তা। সঠিকভাবে রোগের চিকিৎসা না হয় শুধু রোগী নয় রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের ভেতরে তৈরি করে দেয় একটি চিন্তার দেওয়াল। তার কারণে রাতে ঘুম আসে না।
- দুশ্চিন্তা আর উদবিগ্নতা- অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা থেকে শুরু হয় উদবিগ্নতা। অনেকেরই চাকরি হচ্ছে না, কমে এসেছে অন্যান্য কাজ ও ব্যবসার সুযোগ। তার কারণে দুশ্চিন্তা আর উদবিগ্নতা বৃদ্ধি পায় এর ফলে রাতে ঘুম আসে না।
ঘুম না আসার ঔষধ
ঘুম বৃদ্ধির উপায়
- প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যান এবং একই সময় ঘুম থেকে উঠুন, ছুটির দিনগুলো তো ঘুমের একই রুটিন বজায় রাখুন।
- তরল খাদ্য সন্ধ্যার পর থেকে কমিয়ে দিন, ঘুমের অত্যন্ত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে ফেলুন।
- নিকোটিন কফি ও অ্যালকোহল সন্ধ্যায় পরিহার করুন, কফি পান করলে ঘুমের আট ঘণ্টা আগে করতে হবে।
- প্রতিদিন অল্প বিস্তার ব্যায়াম করুন, প্রতিদিনের হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম আপনাকে একটি সুন্দর উপহার দিতে পারি।
- সাধারণত রাতে ঘুমাবেন, দুপুরের ঘুম কিন্তু রাতের বিশ্রামাগী কেড়ে নিতে পারে।
- আরামদায়ক পিছনেও নরম বালিশ বেছে নিন, আর কেউ যদি আপনার সাথে সয় তবে দেখতে হবে দুজনের জন্য প্রজার্ত জায়গা আছে কিনা।
- শিশু বা পোষা প্রাণীর সঙ্গে একই বিছানায় ঘুম কখনো ব্যক্তির ঘুম না হওয়ার মূল কারণ হতে পারে না।
- একই কথা প্রতি রাতে মনকে শোনান এখন সব বন্ধ করে আমি ঘুমাবো।
- যখন আপনি ক্লান্ত ও ঘুমে ভেঙে পড়ছেন তখনই আলো বন্ধ করুন এবং ঘুমাতে যান।
- ঘুমের ঔষধ শুধু শেষ অবলম্বন হিসেবে রাখুন চিকিৎসকের পরামর্শে শুধু ঘুমের ঔষধ খেতে পারেন, কখনোই নিজে থেকে খাবেন না।
কি খেলে ঘুম বেশি হয়
- কাঠবাদামে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু ও মাংস পেশীকে শান্ত করে।
- সবজির স্যুপ।
- আপেল।
- কিসমিস।
- গরম দুধ।
- মিষ্টি আলু, মিষ্টি আলুকে বলা হয় ঘুমের মাসি।
- এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url