বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায়

বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে সঠিক জায়গাতে এসেছেন। আজকের এই আর্টিকেলে বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। অনেক সময় আমাদের সাপে কামড়ায় কিন্তু আমরা সেই কামড় দেখে চিনতে পারিনা যে সাপটি বিষাক্ত ছিল কিনা? তাই আপনাদের সুবিধার্থে বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায়

বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় - বিষধর সাপ চেনার উপায়

বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় হল প্রথমে আমাদেরকে সাপটিকে চিনতে হবে। অনেক সময় বনে জঙ্গলে হাঁটার সময় আমাদেরকে সাপে কামড়াতে পারে। তখন আমরা যেন খুব সহজেই সাপের কামড় দেখে চিনতে পারি এটা কোন সাপ কামড়েছে।

আমাদের দেশে ছয় ধরনের বিষাক্ত সাপ রয়েছে। তাই প্রথমে আমাদেরকে বিষধর সাপ চেনার উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। নিচে বিষধর সাপ চেনার উপায় এবং বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় উল্লেখ করা হলো।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চা হওয়ার কত দিন পর স্ত্রী সহবাস করা যায়?

বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

  • কিং কোবরা
  • গোখরা সাপ
  • শাখামুটি
  • খরিশ গোখরা
  • চন্দ্রবোড়া
  • কালাচ

কিং কোবরা - আমরা অনেকেই কিং কোবরা সাপের নাম শুনেছি। বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং সব থেকে লম্বা সাপ হলো কিং কোবরা। এই প্রজাতির সাপগুলো অন্য সবগুলোকে খেয়ে ফেলে। এই সাপের বিষ স্নায়ুতন্ত্র কে আক্রমণ করে থাকে। আমাদের বাংলাদেশের সুন্দরবনে কিং কোবরা দেখা যায়। এ সাপের শরীর কালো এবং জলপাই বর্ণের হয়ে থাকে।

গোখরা সাপ - আমরা গ্রাম অঞ্চলে অথবা শহরে যে সকল সাপুড়ে দেখতে পায় সাধারণত তাদের সাথে গোখরা সাপ বেশি থাকে। গোখরা সাপ শুষ্ক স্থানে থাকতে বেশি পছন্দ করে। গোখরা সাপ এর পেছনে চশমার মত নকশা থাকে।

শাখামুটি - বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শাখামুটি। এই সাতটি বিষধর কেউটে ও কালাচকে খেয়ে থাকে। শাখামুটি সাপ যেখানে থাকে সেখানে অন্য বিষধর সাপগুলো থাকে না। আপনি যদি শাখামুটি সাপের কোন ক্ষতি না করে থাকেন তাহলে সহজে এসব আপনাকে কামড় দেবে না।

খরিশ গোখরা - গো খারাপ প্রজাতির সাপের মধ্যে খরিশ গোখরা পড়ে। এরা সাধারণত পুরাতন বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, ইদুরের গর্ত অথবা গাছের কোটরে বসবাস করতে বেশি পছন্দ করে। খরিশ গোখরা সাপের বিষ কার্যকারিতা ও অনেকটা কমন।

চন্দ্রবোড়া - চন্দ্রবোড়া সাপ দেখতে অনেকটা অজগর সাপের মত। এদের গায়ের রং সাধারণত বাদামী রঙের হয়ে থাকে এবং মোটা হয়ে থাকে। চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ রক্তে কাজ করে শরীরের টিস্যু গলিয়ে ফেলে। চন্দ্রবোড়া সবগুলো অনেক ধীর গতির হয়ে থাকে।

কালাচ - গোখরা সাপের থেকেও বিষাক্ত সাপ হলো কালাচ। কালাচ সাপ দেওয়ালে উঠতে খুবই দক্ষ তাই মানুষের বিছানায় সহজে উঠে যেতে পারে। কালাচ সাপগুলো ব্যাঙ এবং ইঁদুর ধরে খেতে পছন্দ করে।

বিষধর সাপ চেনার উপায় হল চোখের মনি দেখতে লম্বাটে হয় এবং এদের বিষ দাঁতগুলো লম্বা হয়ে থাকে। লম্বা বিজ দাঁতের মাধ্যমে কামড় দিয়ে মানুষের দেহের বিষ ঢুকে যায়। যদি কখনো এ ধরনের সব দেখেন তাহলে বুঝতে হবে যে এটি একটি বিষাক্ত সাপ।

সাপে কামড়ানোর লক্ষণ

আমরা জানি যে সাপ কামড়ালে সাপের বিষগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করে যার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা যায়। সাপে কামড়ানোর লক্ষণ গুলো চেনার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে সে সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সাপে কামড়ানোর লক্ষণ জানা থাকলে খুব সহজেই এর চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়।

সাপে কামড়ানোর লক্ষণঃ

১। সাপ কামড়ালে দুই চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে।

২। যে স্থানে সাপ কামড়েছে সেই স্থানে প্রচন্ড পরিমাণে জ্বালা যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়।

৩। সাপ কামড়ানোর অন্যতম একটি লক্ষণ হল শরীর ফুলে যাওয়া।

৪। যদি কখনো সাপ কামড়ায় তাহলে যাকে কামড়াবে সেই ব্যক্তি চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করবে।

৫। সাপ কামড়ালে গলা বন্ধ হয়ে আসবে।

৬। সাপ কামড়ালে ঢোক গিলতে অসুবিধা হবে এবং গলা ব্যথা হবে।

৭। বমি বমি ভাব হওয়া মাঝেমধ্যে বমি হওয়া। পেট খারাপ হওয়া এর অন্যতম লক্ষণ।

৮। যে স্থানে সাতখানা হবে সেই স্থানের দাঁতের দাগ।

৯। ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত পড়তে থাকা।

১০। অতিরিক্ত পরিমাণে ঘেমে যাওয়া।

১১। খুবই দ্রুত হৃদস্পন্দন হওয়া।

কালাচ সাপের কামড় চেনার উপায়

কালাচ সাপ খুবই বিষধর একটি সাপ। আমরা অনেকেই কালাচ সাপের কামড় চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চাই সাধারণত নিজের শরীরের সুরক্ষার জন্য। না হলে অনেক সময় এটি আমাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কালাচ সাপের কামড় চেনার উপায় সম্পর্কে আজকে আপনাদের বিস্তারিত ভাবে জানাবো কিন্তু প্রথমে আমাদেরকে কালাচ সাপ কিভাবে চিনব তা জেনে নেব তাহলে বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় জানতে পারবো।

আরো পড়ুনঃ কোরআন তেলাওয়াত এর ফজিলত

  • কালাচ সাপের শরীরের রং ঝকঝকে কালো হয়ে থাকে।
  • কালাচ সাপের পেটের রং সাদা এবং হলুদ হয়ে থাকে।
  • কালাচ সাপের ঘাড়ের কিছুটা পর থেকে সাদা রঙের জোড়া জোড়ায় লেজ পর্যন্ত আংটির মতো দাগ দেখা যায়।
  • কালাচ সাপের জিহ্বার রং উজ্জ্বল গোলাপী বর্ণের হয়ে থাকে।
  • কালাচ সাপের মাথাটা হাতের আঙ্গুলের মতো আকৃতি হয়।
  • কালাচ সাপ এর ডোরা ব্রেসলেট এর মত গোলাকার দাগ মাথার পরে পেটের দিকে এসে ডোরা ডাবল হয়ে যায়।

১। কালাচ সাপ কামড়ালে সাধারণত রাতের বেলায় কামড়ে থাকে। কালাচ সাপ কামড়ানোর কয়েক ঘণ্টা পরে তলপেটে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা হয়ে থাকে।

২। কালাচ সাপ কামড়ালে সেই ব্যক্তির চোখের পাতা পড়ে আসে বমি ভাব হয় এর সাথে অবশ্যই জ্বর হতে পারে।

৩। কালাচ সাপের বিষ এর কারণে প্যারালাইসিস পর্যন্ত হতে পারে। এর পাশাপাশি শরীরের গিটে গিটে ব্যথা হতে পারে।

৪। কালাচ সাপ কামড়ালে সময়ের সাথে সাথে রক্ত জমাট বাধা শুরু হয়ে যায়। এছাড়া যত সময় অতিবাহিত হতে থাকে মনে হয় নিজের দম বন্ধ হয়ে আসছে।

সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা

আমরা যদি বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় গুলো জেনে রাখতে পারি তাহলে খুব সহজেই সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা এর মাধ্যমে এটিকে কমিয়ে রাখতে পারব এরপরে মেডিকেলে গিয়ে ভালো চিকিৎসা নেওয়া যাবে। সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা কি নিবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন।

১। সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম হলো রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে। কারণ যখন সাপে কামড়ায় তখন সে ব্যক্তি অতিরিক্ত আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যায়। যার কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসে। তাই রোগীকে প্রথমে বোঝাতে হবে যে এগুলো কিছু না তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন।

২। সাপে কামড়ালে সেই ব্যক্তিকে অতিরিক্ত পরিমাণে নড়াচড়া করা যাবে না। যদি অতিরিক্ত পরিমাণে নড়াচড়া করা হয় তাহলে সাপের বিষ সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। স্কেল টুকরো সহ হাতে পায়ে কাপড় দিয়ে হালকা করে বেঁধে দিতে হবে। যেন হাত অথবা পা ভাঁজ করা না যেতে পারে।

৩। সেই স্থানে সাপ কামড়েছে সেই স্থানে কখনো কাটা ছেঁড়া করা উচিত নয়। কেবল ভেজা কাপড় দিয়ে অথবা জীবাণুনাশক কাপড় দিয়ে স্থানটিকে মুছতে হবে।

৪। যেখানে সাপ কামড়াবে সে স্থান থেকে ভেতরের দিকে সাথে সাথে গামছা অথবা কাপড় দিয়ে একটি গিফট এমনভাবে দিতে হবে যেন খুব আটোসাটো অথবা খুব ঢিলে কন্টাই না হয়।

৫। যত সম্ভব তাড়াতাড়ি রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কখনোই অবহেলা করে দেরি করা যাবে না হাসপাতালে নিয়ে গেলে এর চিকিৎসা শুরু করলে রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠবে।

সাপে কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম

আমরা অনেকেই সাপে কামড়ালে সাপে কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম সম্পর্কে জানতে চায়। যদিও এটি নিজে থেকে দেওয়া কখনোই উচিত নয়। মেডিকেল নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডাক্তার আপনার জন্য যা চিকিৎসার প্রয়োজন তাই করবেন। তবুও সাপে কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম জেনে রাখার তথ্যের জন্য ভালো।

আপনার শরীরে কি পরিমান বিষ ঢুকেছে তা নির্ভর করে সাপের কামড়ের উপর। সাপে কামড়ালে বিভিন্ন ভ্যাকসিন এখন বাজারে পাওয়া যায়। সাপে কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম হল অ্যান্টিভেনম। সাপের বিষ প্রতিরোধ করার জন্য এই ভ্যাকসিনটি খুবই জনপ্রিয়। কোন রোগীকে সাপে কামড়ালে সেই রোগীকে সাধারণত এই ভ্যাকসিনটি দেওয়া হয়ে থাকে।

সাপে কামড়ানোর ছবি

সাপে কামড়ালে কি রকম অবস্থা হয় আমরা অনেকেই এ সম্পর্কে জানিনা। যার ফলে সাপে কামড়ানোর ছবি দেখতে চাই। সাপে কামড়ালে সেই জায়গাটি কেমন হয় সাপে কামড়ানোর ছবি নিজে উল্লেখ করা হলো দেখে নিন।

আরো পড়ুনঃ ছাত্রদের টাকা আয় করার ২০ টি সেরা কার্যকরী উপায়

ছবিঃ istockphoto
ছবিঃ bengali.news18

ছবিঃ mountsinai

আমাদের শেষ কথাঃ বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায়

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে সাপে কামড়ানোর ছবি, সাপে কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম, সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা, কালাচ সাপের কামড় চেনার উপায়, সাপে কামড়ানোর লক্ষণ, বিষধর সাপ চেনার উপায়, বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।২০৭৯১

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url