এজমা কি ভাল হয়

এজমা কি ভাল হয় নাকি হয় না এ বিষয়ে আপনি কতটুকু জানেন? এজমা কি ভাল হয় এ সম্পর্কে অনেকের প্রশ্ন থাকে। এজমা কি ভাল হয় নাকি ভালো হয় না সে বিষয়ে আজকে আলোচনা করব। এ বিষয়ে আজকে এই পোস্টে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব।
এজমা কি ভাল হয়
এজমা রোগটি সাধারণত পরিবেশগত এবং বংশগত কারণে হয়ে থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেই এজমা কি ভাল হয় নাকি হয় না।

পোস্ট সূচিপত্র: এজমা কি ভাল হয়

ভূমিকা

এজমা বা হাঁপানি শ্বাসনালীর প্রদাহ জনিত রোগ। এ রোগের কারণে অনেক সময়ই রোগীদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বিশ্বের অনেক মানুষ এজমা রোগে আক্রান্ত। এজমা রোগীদের বুকের মধ্যে সাঁ সাঁ শব্দ হতে থাকে এবং ঘন ঘন কাশ হতে থাকে। এজমা বলতে সাধারণত আমরা শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাকে বুঝে থাকি। শ্বাসনালীতে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হলে আমরা এটাকে এজমা বলি।

বিশ্বের প্রায় ১৫ কোটি মানুষ এজমা রোগে আক্রান্ত এবং বাংলাদেশের প্রায় ৫০ হাজার লোক প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এ রোগের চিকিৎসা করায় না। এজমা বা হাঁপানি হলে আস্তে আস্তে সেটা শ্বাসকষ্টের দিকে ধাবিত হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এজমা রোগের জন্য ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। আমরা অনেকেই প্রশ্ন করে থাকি এজমা কি ভাল হয় নাকি ভালো হয় না। এ বিষয় সম্পর্কে আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

এজমা কি

অনেক সময় শ্বাসনালীতে বিভিন্ন ইউসিনোফিল কোষ ও অন্যান্য উপাদান জমা হয়ে শ্বাসনালীর ছিদ্রপথ সংকুচিত হয়ে যায়। শ্বাসনালীর ছিদ্রপথ সংকুচিত হওয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি হয় এবং শ্বাসনালীতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। শ্বাসনালী সরু হয়ে যাওয়া এবং প্রদাহ সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াকে এজমা বলা হয়। আমাদের মাঝে অনেকেই একটি ভুল ধারণা পোষণ করেন। অনেকেই মনে করে থাকেন শ্বাসকষ্ট এবং এজমা এক।
কিন্তু আসলে শ্বাসকষ্ট এবং এজমা দুটি ভিন্ন জিনিস। এজমার ফলেই শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সেজন্য এজমা এবং শ্বাসকষ্ট এক জিনিস নয়। অনেকগুলো রোগের উপসর্গ হিসেবে আমরা শ্বাসকষ্ট অনুভব করি। বিভিন্ন কারণে এজমা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ধুলিবালি, কীটপতঙ্গ, পশু পাখির পালক অথবা বিভিন্ন খাবারের প্রভাবে এজমা রোগ হয়ে থাকে।

এজমা কত প্রকার

এজমা ধরন ভেদে ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এজমা সাধারণত কত প্রকার এবং কোন এজমার জন্য কি ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
এজমা কে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিরতিহীন এজমা, স্থায়ী মৃদু এজমা, স্থায়ী মধ্যম এজমা, অবিরাম তীব্র এজমা।
    • বিরতিহীন এজমা: এ ধরনের এজমা খুব অল্প সময়ের জন্য থাকে। সপ্তাহে দুই দিন কাশি থাকে এবং মাসে দুই দিন রাতে এজমা সমস্যা থাকে। এ ধরনের এজমাতে যারা ভোগেন তাদের বেশি সমস্যা হয় না।
    • স্থায়ী মৃদু এজমা: এ ধরনের এজমা রোগে যারা ভোগেন তাদের সপ্তাহে দুই দিনের বেশি কাশি থাকে এবং মাসে ৩-৪ দিন রাতে এজমার সমস্যা দেখা দেয়।
    • স্থায়ী মধ্যম এজমা: এই ধাপে যারা রয়েছেন তারা সপ্তাহে একের অধিক দিন এজমা সমস্যায় ভুগেন। তাদের নিয়মিত কাজে অনেক ব্যাঘাত ঘটে। বলতে গেলে তারা এজমার সাথে যুদ্ধ করে বাঁচে।
    • অবিরাম তীব্র এজমা: এই ধাপে যারা রয়েছেন তারা প্রতিদিন এজমা সমস্যায় ভুগেন। সপ্তাহে সাতটা দিনই তারা একমাস সমস্যায় কষ্ট পায়। রাতে এসব রোগীরা ঘুমাতে পারেন না। এসব রোগীরা অনেক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই এই ধাপের রোগীদের দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

    এজমা লক্ষণ

    এজমার কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে সহজে বুঝতে পারবেন একজন মানুষের এজমা হয়েছে কিনা। লক্ষণ গুলো দেখে আপনি বুঝতে পারবেন এজমা কি ভাল হয় না হয় না। নিচে এজমার লক্ষণ গুলো দেয়া হলো।
    • শ্বাসনালী সংকুচিত হওয়ার কারণে বুকের ভেতর সাঁ সাঁ শব্দ হতে থাকে।
    • ঘন ঘন কাশি হতে থাকে এবং সাধারণ মানুষের তুলনায় কাশ এর ধরণ অন্যরকম হয়।
    • এজমা রোগীদের শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়।
    • এজমা রোগীরা ঠিক মত শ্বাস নিতে পারেনা কারণ এদের বুক চাপ লেগে থাকে।
    • বুক চাপ ধরে ভারী হয়ে থাকে সে কারণে অনেক সময় দম বন্ধ হয়ে আসে।
    • গর্ভবতী নারীদের এজমা হলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়।
    • এজমা আক্রান্ত রোগীদের ঘন ঘন কাশি দিতে দেখা যায়।

    এজমা হলে কি করনীয়

    এজমা হলে কিছু কাজ করণীয় রয়েছে। এজমা সাধারণত সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব হয় না। কিন্তু কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এজমা থেকে বাঁচা সম্ভব হয়। এজমা কি ভাল হয় না ভালো হয়না সে বিষয়ে এরপর আলোচনা করব। নিচে এজমা হলে করনীয় কি তা বর্ণনা করা হলো।
    • ধূমপান বর্জন করুন।
    • ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন। ধুলাবালি বেশি থাকলে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
    • নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করুন।
    • সকল প্রকার মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন।
    • বাসায় পোষা প্রাণীদের নিয়মিত গোসল করিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
    • এজমার জন্য ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন।
    • এজমার ইনহেলার সব সময় হাতের কাছে রাখুন।
    • নিয়মিত শরীর চর্চা ও ব্যায়াম করতে পারেন।
    • ঘরের বালিশ ও লেপ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
    • শরীরের অতিরিক্ত ওজন কম করুন।
    • ঘরে কার্পেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
    • খুব গুরুতর সমস্যা হলে চিকিৎসকের নিকট গিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করুন।
    • ঠান্ডা জাতীয় খাবার যেমন: আইসক্রিম এবং কোমল পানীয় থেকে বিরত থাকুন।
    • বাইরে যদি অনেক ধুলাবালি থাকে তাহলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন।
    উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা বুঝতে পেরেছেন এজমা হলে করণীয় কি। যারা এজমা রোগে আক্রান্ত তারা অবশ্যই উপরের বিষয়গুলো মেনে চলবেন।

    এজমা কি ভাল হয়

    যারা এজমা রোগে আক্রান্ত তারা অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন এজমা কি ভাল হয়? উত্তরে আমি বলব এজমা সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় না। এজমা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় কিন্তু একেবারে ভালো হয় না। এজমা সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব হয় না কিন্তু কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যাদের বংশগত এজমা রয়েছে বা ছোট থেকে যাদের এজমা রয়েছে তাদের চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব।

    কিন্তু বড়দের এজমা নিরাময় একেবারে সম্ভব নয় কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এজমা রোগটি শতভাগ ভালো হয়ে যাবে এটা কখনো বলা সম্ভব নয়। কারণ আপনার একটু অবহেলা অথবা অসচেতনতার অভাবে এ রোগটি বেড়ে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ এবং নিয়ম কানুন মেনে চলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন এজমা কি ভালো হয় নাকি ভালো হয় না।

    শেষ কথা: এজমা কি ভাল হয়

    প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আলোচনা করলাম এজমা কি ভাল হয় নাকি ভালো হয় না সে বিষয় সম্পর্কে। আশা করি আপনারা সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে জানতে পেরেছেন এজমা কি ভাল হয় নাকি হয় না। এজমা রোগটি সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় না তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। জীবন যাপনে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এজমা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এজমার সমস্যা বেশি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
    কারন এজমার সমস্যা প্রকট হলে সেটা শ্বাসকষ্টে রূপান্তরিত হতে পারে। বেশি শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করাবেন। আজকের পোস্টটি পড়ে যদি আপনার উপকার হয় তাহলে অবশ্যই পোস্টটি পড়ে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার মূল্যবান মতামত আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ। ২৫৭৯২

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url